December 24, 2024, 6:06 pm

সংবাদ শিরোনাম :
দৌলতপুর এক রিক্সাচালকের মরদেহ উদ্ধার পোরশায় সাদিয়ানী কতৃক মানুষ হত্যার প্রতিবাদে গণপ্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট ইমার্জেন্সি এক্সারসাইজ-২০২৪ অনুষ্ঠিত জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তবর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে:উত্তরা পূর্ব থানা কর্মিসভায় আমিনুল হক পারিবারিক কলহের জেরে আপন ভাই কর্তৃক জলিল হত্যা মামলার পলাতক আসামি সাগর (২০) কে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ ও র‍্যাব-৭ লাখো মুসল্লির অশ্রু সজল নয়নে আমিন-আমিন ধ্বনীতে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিন দিনের ইজতেমা কালীগঞ্জে ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী জামিনী কান্ত, গ্রেফতার  ২৯০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-গুলশান সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে ICAO CAA Approval of Training Organizations (ATO) Course এর সমাপনী অনুষ্ঠিত খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত

বহুল আলোচিত রাজধানীর সাভার এলাকায় আকাশ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি হৃদয় গ্রæপের প্রধান সন্ত্রাসী হৃদয় হোসেন @গিয়ার হৃদয়সহ গ্রæপের ০৮ সদস্যকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; বিপুল পরিমাণ দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র‌্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। এ সকল হত্যাকান্ডের পিছনের হৃদয় গ্রæপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। গত ০৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ‘হৃদয় গ্রæপের’ সদস্যরা ‘পিনিক রাব্বি গ্রæপের’ সদস্য আকাশ মাহমুদ নামক এক যুবককে দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও এই গ্রæপের সদস্যরা গত ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামক এক ব্যক্তিকে এবং গত ২১ মার্চ ২০২৪ তারিখ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামক অপর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে বলে জনশ্রæতি রয়েছে। উক্ত হত্যাকান্ডগুলো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূলহোতা হৃদয় গ্রæপের প্রধান ১। মোঃ হৃদয় হোসেন ৥ গিয়ার হৃদয় (২৪), পিতাঃ মোঃ সেলিম হোসেন, সাভার, ঢাকাসহ গ্রæপের অন্যান্য সদস্য ২। মোঃ আরিয়ান আহম্মেদ জয় ৥ ড্যাগার আরিয়ান (২৩), পিতাঃ নাছির খন্দকার, সিংড়া, মানিকগঞ্জ, ৩। নাসির উদ্দিন নাসু ৥ বাবা নাসু (৫২), পিতাঃ মৃত আরিবুল্লাহ, সাভার, ঢাকা ৪। মোঃ আবিরুল হক আবির ৥ কাটা আবির (২৪), পিতাঃ মৃত মফিজুল হক রনি, কুমারখালী, কুষ্টিয়া ৫। জোবায়ের হাসান খন্দকার ৥ পাইটু জোবায়ের (১৯), পিতাঃ নাছির খন্দকার, সিংড়া, মানিকগঞ্জ, ৬। মোঃ জাকির হোসেন রনি (৩০), পিতাঃ মোঃ আইয়ব আলী, সাভার, ঢাকা, ৭। মোঃ জাহিদুল ইসলাম ৥ জাহেদ (৩৬), পিতাঃ মোঃ মতিউর রহমান, সাভার, ঢাকা এবং ৮। আমির হামজা (২১), পিতাঃ নাসির উদ্দিন নাসু ৥ বাবা নাসু, সাভার, ঢাকা’দেরকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সদৃশ্য মূতি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডগুলোর সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা জেলার সাভার এলাকার ‘হৃদয় গ্রæপ’ এর সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের গ্রæপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। ৪-৫ বছর যাবৎ হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রæপ’ পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রæপের সন্ত্রাসীরা একাকি পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভার এলাকায় নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি করা। প্রায়ই মাদক সেবন ও মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো বলে জানা যায়। এই গ্রæপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। গ্রেফতারকৃতরা আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজি পার্টির আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভিতর ‘হৃদয় গ্রæপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রæপের’ সংঘর্ষে সময়ে ভিকটিম আকাশকে ধারালো দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জনশ্রæতি আছে গ্রেফতারকৃতরা পূর্ব শত্রæতার জের ধরে ছিনতাইকৃত টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ ২০২৪ তারিখ ভিকটিম আমজাদ’কে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত গিয়ার হৃদয় সাভার এলাকায় ৪-৫ বছর যাবত একটি সন্ত্রাসী গ্রæপ পরিচালনা করে আসছিল। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো এবং একইসাথে গ্রæপেরও নেতৃত্ব দিতো। গ্রেফতারকৃত হৃদয় সাভারের এনাম মেডিকেল এর সামনে জনসম্মুখে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রæপের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহত আকাশ হত্যা মামলার ১নং পলাতক আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা, মারামারি ও ছিনতাইসহ ০৬টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত ড্যাগার আরিয়ান গ্রেফতারকৃত গিয়ার হৃদয়ের অন্যতম সহযোগী। সে এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য এলাকায় তাকে সবাই ড্যাগার আরিয়ান বলে চিনতো। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত নাসির উদ্দিন@বাবা নাসু গিয়ার হৃদয় গ্রæপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। সে গত ২১ মার্চ ২০২৪ তারিখ রাতে সাভারের সোবাহানবাগ এলাকায় আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি ও হত্যাসহ ০৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আবিরুল@কাটা আবির, আমির হামজা ও জোবায়ের@পাইটু জুবায়ের সাভারে অন্যতম ত্রাস সৃষ্টিকারী হৃদয় গ্রæপের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত জাহিদুল হৃদয় গ্রæপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে হৃদয় গ্রæপের সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করতো বলে তাকে সবাই গ্রæপটির উপদেষ্টা বলতো। সে কষ্টি পাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সাথেও জড়িত। এছাড়াও সে বিভিন্ন ব্যক্তিদেরকে ভূয়া পাথরের মূর্তি দেখিয়ে, কষ্টি পাথর বিক্রির কথা বলে তার সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিত। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় ৬-৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন রনি@মেশিন রনি হৃদয় গ্রæপের অন্যতম সদস্য। সে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের দিন হৃদয়ের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করে এবং উক্ত অস্ত্র বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাড়ায় প্রদান করতো। সে আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়ায় প্রদান করায় তাকে সবাই মেশিন রনি হিসেবে চিনতো। তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন